হেমন্তের বেদনা

এই রকম বৃষ্টিতে ছোপ ছোপ ভিজে যাওয়া হেমন্তকাল  
জীবনানন্দ পায়নি, রবীন্দ্রনাথও না। কেবল আমাদের  
দোরগোড়ায় খেলা করে দু-মুখো উভচর। কাঁঠালপাকা 
রোদের পরে এই রকম রাতদিন ঝির ঝির করে বয়ে যেতে
যেতে আমাদের ক্লান্ত করে, আমাদের শীতার্ত করে…   

আমাদের মনে হয়, এইসব অফিস-আদালত, দু-চার, দশ,  
বিশ হাজার টাকার চাকরিগুলা কেবল জীবন নয়। এই  
দশটা-চারটা মুখ বুজে অফিস করবার তাড়াগুলা ছাড়া   
আমাদের আরো একটা বড়সড় তাড়না আছে। কাজহীন  
সেই অবসরের দুপুরগুলায় একটা নিদারুণ মনখারাপী  
নিয়া আমরা অফিসকর্ম করি। চাকরিদাতার ঝাড়ি খাই!  

অথচ, এইসব বিষাদী দুপুরগুলোতে আমাদের অফিসে  
বসে বসে বসের ঝাড়ি আর নিজের মাথা-মুন্ডু চিবানোর  
কথা ছিলো না। একটা পুরোদস্তুর আলসেমিময় দুপুর   
কাটানোর সুযোগ আমাদের বুর্জোয়াবাদী পৃথিবীতে নাই, 
সমাজতান্ত্রিক পৃথিবীতেও ছিলো বলে মনে পড়ে না।   

একটা কবিতাতান্ত্রিক পৃথিবীর কথা কাউকে কাউকে  
বলতে শুনেছিলাম এক সময়। যেই পৃথিবীতে প্রণয়িনীকে   
দেখা মাত্রই জেনারেল সাহেব হাত-পা তুলে স্যালুট দিবে  
সঁপাৎ সঁপাৎ। ব্লাডি সিভিলিয়ানদের জন্য এত মহৎ  
প্রেম যেহেতু সামরিক বাহিনীর নাই, সেহেতু স্বপ্নভঙ্গের  
বেদনা নিয়া বেচারা কবিকে দূর দেশে মরে যেতে হলো! 

স্বপ্নভঙ্গের বেদনার গর্ভে যেহেতু আমাদের জন্ম, সেহেতু  
অত বেশি স্বপ্ন-টপ্ন আমরা কেউ দেখি না আজকাল… 
তবুও, আমাদেরও তো শীত শীত লাগে। মন খারাপ হয়,  
এইসব অফিস-টফিস, সব ধুচ্ছাই করে ছেড়েছুড়ে দিয়ে  
প্রেমিকার কাছে চলে যেতে ইচ্ছে হয়। প্রেমিকার বুকের  
কাছে। আমাদের কেবল ঘুম পায়। মরে যেতে ইচ্ছে করে… 


২১ অক্টোবর, ১৭। কার্তিকের বিকেল।  
চট্টগ্রাম।  

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মেঘের উপর বাড়ি

অনুসূচনা

মায়া